প্রতিনিধি, সাঘাটা:
চাকুরি ফিরে পাওয়ার জন্য কখনো আদালতে কখনো আবার সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারে-দ্বারে ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে তিনি এখন অসুস্থ। অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসা করতে না পেরে মানবেতরভাবে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। চাকুরিটা ফিরে পেলে শেষ বয়সে নিজের চিকিৎসা আর পরিবারপরিজন নিয়ে বাকী সময়টুকু শান্তিতে বেঁচে থাকতে পারতো। শেষ বয়সে এসে এমন পরিনতি হয়েছে রেলওয়ের বোনারপাড়া স্টেশনের বুকিং ক্লাক বীরমুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেছ আলী প্রধানের।
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কচুয়া গ্রামের হাজী ওসমান আলীর ছেলে বীরমুক্তিযোদ্ধা অসহায় এই ওয়ারেছ আলী প্রধান। বিগত ২০১৬ সাল হতে তিনি সাঘাটা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বীরমুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেছ আলী প্রধানের লাল মুক্তিবার্তা নং ০৩১৭০৫০৫৩৩,গেজেট নং ১১০৭। ১৯৭১ সালে পাকিস্থানী বাহিনীর সাথে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করার পর ১৯৭৩ সালের ১৮ মার্চ রেলওয়ের বুকিং ক্লার্ক পদে বোনারপাড়া রেলওয়ে স্টেশনে যোগদান করেন। ছাত্রজীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আওয়ামী লীগের অংগ সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন । সেই সুবাদে চাকুরিতে যোগদানের পররই রেল শ্রমিক সংগঠনের সাথে জড়িয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদে জেলা,বিভাগ ও কেন্দ্রীয় রেল শ্রমিক লীগের নেতৃত্ব দেন। রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্ব দিতে যাওয়ায় রেলওয়ের উর্দ্ধন কতৃপক্ষ তাকে কোনো নোটিশ ছাড়াই বিগত ১৯৯২ সালের ৩০ জুন চাকুরিচ্যুত করে এবং তার বিরুদ্ধে ১১/৯৩ ও ১২/৯৩ নং দুর্নীতি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় ২০০০ সালে তিনি খালাস পেলেও পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আবারো একটি মামলা দায়ের করা হয় তার বিরুদ্ধে। সে মামলায় আবারো খালাস পেলে রায়ের কপিসহ বীরমুক্তিযোদ্ধ ওয়ারেছ আলী প্রধান তার চাকুরি ফিরে পাওয়ার জন্য রেলওয়ের পশ্চিম এর ডিজি বরাবরে আবেদন করেন। তৎকালীন রেলওয়ের পশ্চিম এর ডিজি তাকে চাকুরিতে পুনবহাল করার জন্য রেলওয়ে পশ্চিম এর জিএমকে নির্দেশ দেন।
কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে চাকুরিতে পুনবহাল না করে ফেরত দেয়া হয়েছে বলে এ বীরমুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ। এদিকে বীরমুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেছ আলী প্রধান চাকুরি হারানোর পর চাকুরি ফিরে পেতে একদিকে মামলার খরচ অন্যদিকে বাড়ি-ঘর বসতভিটাসহ সমস্ত সম্পত্তি নদীগর্ভে বিলিন হওয়ায় নি:স্ব হয়ে পড়েন। চাকুরি হারানো বীরমুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেছ আলী প্রধান জানান, আমি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার চাকুরী ফিরে পেতে তার সাথে দেখা করে প্রার্থনা জানিয়েছি। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক তার ডাকে সারা দিয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি। তার আদর্শের সংগঠন আওয়ামীলীগকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি ভালোবাসি ।
সেকারণে আমি জীবনে অনেক ঘাতপত্রিঘাত সহ্য করেছি এখনও করছি। আমার চাকুরিটাও হারিয়েছি একই কারণে। এখন বয়স হয়েছে চাকুরিটা ফিরে পেলে এই শেষ বয়সে নিজের চিকিৎসা আর পরিবারপরিজন নিয়ে বাকী সময়টুকু শান্তিতে বেঁচে থাকতে পারবো।