ডেস্ক রিপোর্ট:
রিমান্ডে ডিবি’র হাতে আটক গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার হাসিলকান্দি গ্রামের দেওয়ান আরিফুর রহমান আরিফের নানা অপকরর্মের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। ডালিউড থেকে বলিউড হিরো হওয়ার স্বপ্নও তাকে অপরাধের সাথে যুক্ত করে বলে আরিফ পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে দোষ স্বীকার করেছে । উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের বেড়ে ওঠা আরিফ পড়া-লেখায় সময় না দিয়ে ঝুঁকে পড়ে নিজেকে হিরো হিসাবে গড়ে তোলার। নিজের সুদর্শন চেহেরাকে পুঁজি করে ছাত্র জীবন থেকেই নিজেকে অন্যদের থেকে তৈরি করতে ভিন্ন মানসিকতা নিয়ে। তবে, নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ভিন্নপথ বেছে নেয় দেওয়ান আরিফ। নিজেকে মডেল ও হিরো ভেবে এলাকায় অন্যসহপাঠীদের থেকে একটু থেকে চলাফেরা করে। ছাত্রাবস্থায় অসংখ্য মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এই আরিফ। এই সময়ে তার নারীর সাথে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার নেশাও জাগে। স্থানীয়ভাবে হাসিলৈকান্দি যুব কল্যান সংস্থা (এইচজেকেএস) নামে একটি এনজিও চালু। নিজে ভুয়া প্রকল্প বানিয়ে চাকুরী দেয়ার কথা বলে শতশত বেকার ছেলে মেয়ের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা অর্থ আত্মসাৎ করে। এরপর স্থানীয়দের চাপে সাঘাটা থেকে অবস্থান নেংয় গাইবান্ধা শহরে। কিন্তু সেখানেও সে অর্থ ও নারীর নেশায় নানা কৌশল অবলম্বন করে। নায়িকা ও মডেল তৈরির জন্য কিশোরী ও নারীদের সাথে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। এখানেও সে বেশিদিন টিকতে না পেরে ছেড়ে চলে যায় বগুড়া শহরে। সেখানে তিনবন্ধু মিলে আশিবা ইন্টারনাশনাল নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠা শুরু করে। এ ব্যবসাতেও প্রতারনা থাকায় বেশিদিন টেকসই হয়নি। এরপর যুক্ত হয় সাইবার ক্রাইম অপরাধে। বিবাহিত নারীদের সাথে প্রেম ও মোবাইল ট্রাকিং করে অর্থ হাতিয়ে নেশার কৌশল অবলম্বন করে। একটি মামলা গত সোমবার দিবাগত রাত ১২টায় দিকে তাকে শহরের হাউজিং এস্টেটের বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।
প্রতারক আরিফ অন্যের টাকা আত্মসাৎ করে মাঝে মধ্যেই লাপাত্তা হয়ে আত্মগোপনে থাকতো। ভারত ভুটান নেপালে গিয়ে বিলাসীতা করতো। ফেসবুকে হিরো আলম থেকে শুরু করে চলচিত্রের নাম করা নায়ক-নায়িকাদের সাথে ছবি তুলো পোষ্ট দিবো। এছাড়াও বরেণ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে তার ব্যাপক পরিচয় ছিল যা সে প্রতারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতো।
সে তথ্য প্রযুক্তি লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মৃত দেওয়ান আক্তারের ছেলে ও গাইবান্ধা জেলা আইন সহায়তা কেন্দ্র ফাউন্ডেশনের সহ সভাপতি। এ ছাড়া বগুড়া শহরের হাউজিং এস্টেটের পদ্মা ভবনে তার নামে একটি ফ্লাট রয়েছে। বগুড়া জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সাইবার ইউনিট সূত্রে জানা যায়, আরিফ মূলত প্রেমের ফাঁদ ফেলে নারীদের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকাপয়সা হাতিয়ে নিতেন। এমনকি বিভিন্ন লোকের টাকাও হাতিয়েছেন তিনি। গত ২ এপ্রিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এমন একটি অভিযোগ আসে আমাদের কাছে। সেই অভিযোগ তদন্ত করে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়ার পর একটি অভিযান পরিচালনা করে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সাইবার ইউনিট। অভিযানে শহরের হাউজিং এস্টেটের সেই বাসভবন থেকে আরিফকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর আরিফের ব্যবহৃত দুইটি মোবাইলসহ একাধিক সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়।
এই দুইটি মোবাইলে বহুসংখ্যক মেইল এবং ফেসবুক একাউন্ট পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও তার কাছে পাওয়া বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড জব্দ হয়। পুলিশ আরও জানায়, আরিফ নিয়মিত অভিযোগকারীসহ তার সংগঠন ও প্রতারণার শিকার ব্যক্তিদের ফোন ট্র্যাক করতেন।
গাইবান্ধা জেলা আইন সহায়তা কেন্দ্র ফাউন্ডেশনের সভাপতি আব্দুল মাজেদ সরকার জানান, আরিফ তার সংগঠনের সহসভাপতি এবং তথ্য প্রযুক্তি লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক।
ফোন ট্র্যাকের বিষয়ে আব্দুল মাজেদ বলেন, আরিফ তার ব্যবসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ফোন ট্র্যাক করতেন। কিন্তু আমাদের ফোনও যে ট্র্যাক করতেন এটা আমাদের জানা ছিল না। আরিফ কয়েকমাস ধরে আমাদের সংগঠনের সাথে জড়িত। তার প্রতারণার বিষয়টি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করার পর জানতে পারলাম।
বগুড়া জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সাইবার ইউনিটের প্রধান পুলিশ পরিদর্শক এমরান মাহমুদ তুহিন বলেন, প্রাথমিকভাবে তিনি প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেছে। আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে সে আরো চাঞ্চল্যকর অপরাধের তথ্য গোয়েন্দা পুলিশকে জানায়।