সাঘাটা প্রতিনিধি:
স্বাধীনতার ৫০ বছরেও ঠাঁই মেলেনি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মৃত শফিকুলের ইসলামের পরিবারের সদস্যদের।
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মৃত শফিকুল ইসলামের জমি ,বসতভিটা ও নিজস্ব বাড়ি ঘর না থাকায় তার পরিবারের লোকজন প্রায় ৩০ বছর ধরে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে বসবাস করে আসছেন।
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার চিথুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুর রশিদ মন্ডলের ছেলে ছিলেন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে জন্মভূমি ও দেশরক্ষার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। শফিকুলদের নয় মাস জীবন বাজি রাখা যুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও যুদ্ধকালীন শত্রুপক্ষের ছোড়া গুলি ডানপায়ে লেগে আহত হন মুক্তিযোদ্ধ শফিকুল ইসলাম। পরবর্তীতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে বাংলাদেশ রেলওয়ে চাকুরিতে যোগদান করেন। বৈবাহিক জীবন শুরু হলে তার দাম্পত্য জীবনে ২ স্ত্রী ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ে সন্তানসহ পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ সুখেই দিন চলছিল যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শফিকুলের।
এরই মাঝে পায়ের ওই গুলিবিদ্ধ স্থানে আবারো ক্ষত দেখা দিলে তিনি ঢাকা পিজি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন।
সেখানে অপরেশনের মাধ্যমে কেটে ফেলতে হয় এ মুক্তিযোদ্ধার গুলিবিদ্ধ পা-টি । ফলে শারীরিক অযোগ্যতার কারণে রেলওয়ের চাকুরি করা তার ভাগ্যে আর হয়নি,বাধ্য হয়ে চাকুরি ছাড়েন এ বীর মুক্তিযোদ্ধা। চাকুরি এবং পা হারানোর পাশাপাশি চিকিৎসার খরচ জোগাতে গিয়ে জমি-জমা বসতবাড়ি ও ভিটামাটি বিক্রি করে নি:স্ব হয়ে পড়েন এ মুক্তিযোদ্ধা।
পরে গৃহহারা এ মুক্তিযোদ্ধাকে অসুস্থ্য অবস্থায় তার বড় স্ত্রী ৩ ছেলে-মেয়ে নিয়ে মহিমাগঞ্জ শ্বশুর বাড়িতে আশ্রায় নেন এ যুদ্ধ্হত মুক্তিযোদ্ধা। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকায় নিজের চিকিৎসা আর সংসারের খরচ জোগানো কঠিন হয়ে পড়ে এ মুক্তিযোদ্ধার। ফলে দুই স্ত্রীর সংসারেই জেকে বসে অভাব অনটন। ফলে ধারদেনা করে চলে তাদের সংসার। অভাবের কারণে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া এসএসি পাশের পর আর এগোনো সম্ভব হয়নি। আশ্রায়হীন এ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের আশ্রায় স্থল হিসেবে জমির জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রানালয়ে অধিনে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন নিবেদন করেও শেষ পর্যন্ত মেলেনি আশ্রায় স্থল । অবশেষে তিনি বিগত ২০১১ সালের ২ মার্চ বগুড়ারর একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা।
মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুর পর তার স্ত্রী মাহমুদা পরিবারের লোকজনসহ উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের খামারপবন তাইড় গ্রামে বড় মেয়ের বাড়িতে আশ্রায় নেন । এখনও তাদের মেলেনি সরকারী জায়গা-জমি কিংবা ঘর-বাড়ি। স্ত্রী মাহমুদা বেগম জানানা, নিজে ব্রেইনস্টোকের রোগী, এসএসসি পাশ বেকার এক ছেলে,দ্বিতীয় মেয়ের বিবাহের দায় এখনও পরিশোধ হয়নি। মুক্তিযোদ্ধার কোটায় জোটেনি ছেলে-মেয়ের চাকুরি । এদিকে মক্তিযোদ্ধার পরিবারের সম্মানী ভাতার টাকায় তার চিকিৎসা এবং বেকার ছেলের স্ত্রী সন্তান নিয়ে বিবাহিত বড় মেয়ের বাড়িতে প্রায় ২০ বছর যাবত বসবাস করতে হচ্ছে।
বর্তমান সরকার দেশব্যপী ভুমিহীন ও সহ অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের খাসজমি এবং বাড়ি-ঘর দিলেও স্বাধীনতার ৫০ বছরে তা জোটেনি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মৃত শফিকুল ইসলামের অসহায় পরিবারের ।
এজন্য ছেলে এবং ছেলের বৌ নাতনী সহ মাথা গোজার ঠাঁই হিসেবে সরকারী একটু জায়গা-জমি অথবা বাড়ি-ঘর পাওয়ার আকুতি এ অসহায় পরিবারের।