কোনো সংক্রামক রোগ যখন বিশাল একটি জনগোষ্ঠীর মাঝে খুব দ্রুত সংক্রমিত হয়ে পড়ে; তখন বলা হয় রোগটি মহামারী আকার ধারন করেছে। আর রোগটি যখন বিশ্বব্যপি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তখন তাকে বলা হয় বিশ্বমারি বা প্যানডেমিক। পৃথিবীর ইতিহাসে যুগে যুগে অসংখ্য মহামারীর ঘটনা ঘটেছে এবং এসব মহামারীতে মৃত্যু হয়েছে কোটি কোটি মানুষের। এসব মহামারী এবং বিশ্বমারীর মধ্যে রয়েছে প্লেগ,ফ্লু, গুটিবসন্ত, ইনফ্লুয়েঞ্জা,টাইফয়েড, হাম,ইবোলা, কলেরা,ডায়রিয়া এবং সর্বশেষ যোগ হয়েছে বিশ্বমহামারী করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯।বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে পৃথিবীর প্রায় ২২০টি দেশে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা ৭কোটি ২৮ লক্ষ৫১ হাজার ৭৪৭ জন, মৃত্যুর সংখ্যা ১৬ লক্ষ ৪৩ হাজার ৩৩৯ জন।আর বাংলাদেশে আক্রান্ত রোগী ৪ লক্ষ ৯৫ হাজার ৮৪১ জন, মৃত্যুর সংখ্যা ৭ হাজার ১৫৬ জন এবং সুস্থ হয়েছে প্রায় ৪ লক্ষ ৩৩ হাজার ৬১৪ জন।নিঃসন্দেহে বিশ্বজুড়ে এই মহামারী শিল্প, অর্থনীতি,রাজনীতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করেছে।সেদিক থেকে বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের সকল সেক্টরে কম বেশি কার্যক্রম চললেও শুধুমাত্র শিক্ষা ব্যবস্থাই বন্ধ রয়েছে।কিন্তু কেন?এই কেন এর উত্তরটি বিভিন্ন ভাবে দেয়া যায়, যেমন-হতে পারে আমাদের সরকার বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর কোন সমাধান খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হয়েছেন অথবা উন্নত বিশ্বের কোনো দেশের মুখপানে তাকিয়ে রয়েছেন যে তারা কিভাবে সমাধান করেন,পরে তাদের মডেল কপি করে সমাধান টানবেন অথবা হতে পারে এতো ব্যস্ততার মাঝে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভাবার তাদের সময় কোথায়? কি হাস্যকর তাই নাহ! দুঃখজনক হলেও একথা সত্য যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা সরকার মহল যদি আসলেই মন থেকে শিক্ষার্থীদের কথা ভাবতেন তাহলে এই দীর্ঘ নয় মাসে আমরা এর সমাধান খুঁজে পেতাম।যেখানে আমাদের বীরেরা দেশ স্বাধীন করেছেন নয় মাসে সেখানে করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করা অসম্ভব কিছু ছিল না।
আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতের প্রকোপ বাংলাদেশে যেহেতু বেশী সেহেতু সংক্রমণও বেড়েই চলবে।সেটি আবারও রিকাভার করতে করতে পুনরায় পরবর্তী মৌসুমের শীত চলে আসবে।তাহলে তৃতীয় দফা আক্রমণ আবারও শুরু হবে। তারমানে আমাদের কাছে এ সমস্যা সমাধানের কোনো পথ কি খোলা নেই? মনে হচ্ছে করোনার ভ্যাকসিন ছাড়া এর সমাধান হবে না।কিন্তু সেই ভ্যাকসিনেরও তো কোনো নিশ্চয়তা নেই।তাহলে শিক্ষার্থীদের কি হবে এ নিয়ে ভেবে দেখার কি কেউ নেই?আরেকটি বিষয় লক্ষ করুন, আমাদের বিশেষজ্ঞবৃন্দ ও সরকার যে সামাজিক দুরত্ব বা কোয়ারেন্টাইন নিরাপত্তার কথা বলছেন সেটির বাস্তবতা কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমানে সম্পূর্ণ বিপরীত।কারণ ধরুন একটি পরিবারে পিতামাতাসহ সদস্য সংখ্যা চার জন। তারমধ্যে দুই জন শিক্ষার্থী রয়েছে।এখন, বাবা কিংবা মা কোনো চাকুরী, ব্যবসা অথবা কৃষিকাজ করে সংসার পরিচালনা করেন।এক্ষেত্রে বাবা অথবা মাকে জীবিকার সন্ধানে বাইরে যেতেই হবে।সুতরাং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ না কেউ যেহেতু প্রতিদিন বাহিরে যাচ্ছে সেহেতু পরিবারে যে তারা নিরাপদে আছেন এ কথাও কিন্তু বলা যাবে না।
আমার কাছে মনে হয়েছে , সরকারের আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল এবং এখনও সে সুযোগ রয়েছে।সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পক্ষে যেসকল যুক্তি দিয়েছেন যেমন-ক)সরকার শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে চান। তাই বিশেষজ্ঞদের মতামতানুসারে সরকার সংক্রমন থাকা অবস্থায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে চান না।খ)শীতের সময় করোনার দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের সঙ্কা রয়েছে যা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। গ)অভিভাবকেরা আতঙ্কে রয়েছেন, তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখাই ভালো। ঘ)অনেক দেশেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে আবার বন্ধ করতে হয়েছে। নিঃসন্দেহে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পেছনে সরকারের যুক্তিগুলো যথার্থ কিন্তু আমার প্রশ্ন এ সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার বা শিক্ষামন্ত্রনালয় কতটুকু কাজ করছেন? আমারা অটোপ্রমোশন ব্যতিত তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখি নি। যেটি নিয়ে আবার বিভিন্ন মহলের আলোচনা সমালোচনা রয়েছে বিভিন্ন রকম।সুতরাং অতি শীগ্রই শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা সরকারকে দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো ও অটোপ্রমোশনের বাইরে এসে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভাবতে হবে। প্রয়োজনে ইউনিসেফের গাইডলাইন,আমাদের বুদ্ধিজীবী ও গবেষকদের সম্পৃক্ত করে পরিকল্পিত ভাবে এ সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।নচেৎ শিক্ষার্থীরা তাদের ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে যে ধোঁয়াশার মধ্যে পড়েছে তা আরও অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি কমে যাবে শিক্ষার হার এবং বেড়ে যাবে বাল্যবিবাহ,বেকারত্ব, ঝড়ে পড়বে অনেক শিক্ষার্থী।যা আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে পিছিয়ে দিতে পারে আরও এক যুগ।
লেখক: মোঃ রুবেল মিয়া পাভেল