শিশু কারণে-অকারণে রেগে গেলে দস্যিপনা করে একেবারে বাড়ি মাথায় তুললে কীভাবে তাকে শান্ত করবেন? কীভাবে পাল্টানোর চেষ্টা করবেন তার স্বভাব? রইল তার পরামর্শ।
আমরা হয়তো মনে করি শুধু বড়দেরই রাগ থাকে। কিন্তু কখনোই হয়তো সেভাবে মাথায় আসে না আগুনে রাগ থাকে একরত্তি ছোট্ট শিশুরও। তারা অনেকে আবার বাইরে কারও সামনে বের হলে একদম চুপচাপ স্বভাবের হয়ে যায়। এদিকে ঘরে ফিরে পান থেকে চুন খসলেই বাবা-মাকে এটা ভেঙে, ওটা ছুড়ে, হাতের সামনে নতুন বই পেলে তার পাতা ফরফর করে ছিঁড়ে রাগ প্রকাশ করে। একরত্তি বাচ্চার সেই দৌরাত্ম্য যে কখনও নিজের চোখে দেখেনি তার পক্ষে বিশ্বাস করা মুশকিল।
১. রুটিনের প্রতি খেয়াল রাখুন
শিশু বয়সে নিজেই একটা রুটিন মেনে চলবে, এমনটা আশা করা ঠিক নয়। তাই ওর প্রাত্যহিক রুটিনের প্রতি আপনাকেই খেয়াল রাখতে হবে। কখন তার খিদে পায়, কখন তার তেষ্টা পায়, কখন তার ঘুমানো দরকার, একটু খেয়াল করে সেই মতো তাকে সঙ্গ দিতে পারলে আপনার সোনামণি সহজে রাগ করার কারণ খুঁজে পাবে না।
২. প্রাধান্য দিন
শিশুরা অধিকাংশ সময়ই বোঝে না কোনটা তার জন্য ভালো আর কোনটা তার জন্য খারাপ। তাই বলে তার সব মতামত, তা সে যত আধো আধো আর যত বালখিল্য সুলভই হোক না কেন, উড়িয়ে দিলে চলবে না। তার পছন্দ না-ই বা শুনলেন, এমন ফন্দি করুন যাতে তার মনে হয় তার মতামতও অন্যরা শুনছে। হয়তো আপনার সোনামণিকে দুধ কিংবা ফল কোনো একটা খাওয়াতে চান। তার সামনে সেই দুটো বিকল্পই তুলে ধরুন। জানতে চান সে ওই মুহূর্তে কী খেতে চায়, দুধ না ফল? একইভাবে জামা পরানো, গোসল করানোর মতো প্রাত্যহিক কাজগুলো করার সময়ও শিশুর কথা রাখার অন্তত ভান করুন। এতে তার নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হবে। ফলে রাগারাগি কিছুটা হলেও কমবে।
৩. চেষ্টা করুন মনোযোগ ঘোরানোর
শিশুদের জীবনের একটা সুবিধা বা অসুবিধা যা-ই বলুন না কেন, খুব বেশিক্ষণ একই বিষয় নিয়ে ওরা ভাবতে পারে না। ফলে কোনো কারণে শিশু রেগে গিয়েছে বুঝতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে চেষ্টা করুন তার মন ভোলানোর জন্য। সেই জায়গা থেকে ওকে সাময়িকভাবে সরিয়ে নিয়ে যান অন্যত্র। টিভিতে কিছু দেখে রেগে গেলে ছাদে নিয়ে চলে যান। পিঁপড়ে কামড়েছে বলে কাঁদলে খেলনা এনে দিন হাতের কাছে। রাগের কারণ থেকে ওর মনটা যত তাড়াতাড়ি দূরে নিয়ে যেতে পারবেন, তত সহজে রাগটা কমে যাওয়ার আশা।
৪. যথেষ্ট সময় দিন
লকডাউন-আনলকের এই আবহে বাড়ির কাজ কিংবা ওয়ার্ক ফ্রম হোম ইত্যাদি সামলে বাচ্চার জন্য সময় বের করা এখনও বেশ কঠিন। কিন্তু অকারণে বা তুচ্ছ কারণে শিশু বারবার মেজাজ হারাচ্ছে দেখলে তাকে আলাদা করে সময় দিতেই হবে। মনোযোগের অভাবেও বাচ্চারা অনেক সময় তিরিক্ষি মেজাজ হয়ে থাকে। কাজের ফাঁকেও যে তার জন্য আপনার সময় আছে, এটা দেখতে পেলে কিন্তু সে অনেকটা শান্ত হবে।
৫. সহজ করে কথা বলুন
তার কথা বড়রা মন দিয়ে শোনে না বলেই হয়তো, কিছু বুঝতেই চায় না। আর বড়রা যে কী বলছে, বাচ্চাও অনেক সময় তা পরিস্কার করে বুঝতে পারে না। সেই থেকেই জন্মায় রাগ। জমা হয় অভিমান। জমতে-জমতে পাহাড় হলে ফেটে বেরিয়ে আসে ক্ষোভ হয়ে। এ জিনিস এড়াতে চাইলে বাচ্চার কথা মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করুন। আপনি শেষমেশ তার কথা বুঝতে না পারলেও অন্তত বোঝার চেষ্টা করছেন, এটুকু বুঝতে পারলেও তার ভালো বই মন্দ লাগবে না।
৬. তুলনা ছাড়ুন, তুলে ধরুন
ব্যাটম্যান ভালো। কারণ সে ঠিক সময়ে খাবার খায়, শরীরচর্চা করে, দুষ্টু লোকদের ধরে মারে আর তুমি সেসব কিছুই করো না বলে তুমি মোটেও ভালো না আর আসলে দুষ্টু লোক তুমিই, এ রকম কথা কিন্তু বাচ্চারা বারবার শুনতে মোটেও পছন্দ করে না। অন্য কেউ ভালো আর আপনি খারাপ, এ জিনিস কি আপনিও শুনতে পছন্দ করবেন? ফলে কারও সঙ্গেই বাচ্চার তুলনা থেকে বিরত থাকাই ভালো। তুলনার চেয়ে বোঝানোটায় বরং কাজ দেবে বেশি।
৭. সম্মান দিতে শিখুন
মান-অপমানের মতো সূক্ষ্ণ অনুভূতি বড়দের চেয়ে অনেক তীব্র হয়ে আক্রমণ করে ছোট বাচ্চাদের। বাইরের লোকের সামনে কখনও সে রাগারাগি করলে তাকে সেখানেই না বকে আলাদা করে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে বোঝান। ছোট থেকেই বাচ্চাকে শেখাতে পারলে তার রাগারাগি খানিকটা কমবে বলে আশা করা যায়। আর এর সুফল সে পাবে সারাজীবন।
৮. শান্ত থাকুন
বাচ্চা যাতে রেগে না যায়, সেই চেষ্টা করতে গিয়ে নিজেই যদি রেগে একসার হন, তা হলে গোলমাল আরও বাড়বে বৈ কমবে না। শিশু যদি অন্যায় আবদার বা অন্যায় আচরণ করেও, তার পেছনের কারণটা ভেবেচিন্তে খুঁজে বের করতে হবে আপনাকেই। প্রত্যেক মানুষ আলাদা হলেও সৌভাগ্যক্রমে শিশুরা পৃথিবীর যে প্রান্তেরই হোক না কেন, অনেক বিষয়েই একদম এক রকম। ফলে ওদের সামলানোও আসলে খুব সোজা কাজ। শুধু একটু বুদ্ধি করতে পারলে আর একটু ধৈর্য ধরতে পারলেই সব সমস্যার সমাধান।