ডেস্ক রিপোর্ট: নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বন্ধ ঘোষণা করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিস্থিতি বুঝে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখা হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সোমবার করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও সংকট মোকাবেলার কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী একথা জানান। সারাদেশে পর্যায়ক্রমে এ মতবিনিময়ের এবারের ধাপে রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করছেন প্রধানমন্ত্রী।
মতবিনিময়কালে একপর্যায়ে প্রধামন্ত্রী বলেন, ‘স্কুল-কলেজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একটাও আমরা এখন খুলবো না। …অন্তত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই স্কুল-কলেজ সবই বন্ধ থাকবে, যদি করোনাভাইরাস তখনো অব্যাহত থাকে।’ করোনাভাইরাসের প্রকোপ থামলেই স্কুল-কলেজ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
গেল বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম শনাক্ত হওয়া নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। এরপর ১৭ই মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্কুল, কলেজসহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধের ঘোষণা দেয় সরকার। পরে দফায় দফায় তা বাড়িয়ে সবশেষ ৫ মে পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা এসেছে। তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে এ তারিখও বাড়ানো হতে পারে তা অনুমান করা যাচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে তা আরো স্পষ্ট হলো।
গেল ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা, এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণায় স্থগিত করা হয়েছে পরীক্ষা। এছাড়াও স্থগিত রয়েছে মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশও। এরই মধ্যে পাঠদান চালু রাখতে টেলিভিশনের মাধ্যমে লাইভ ক্লাস চালু করা হয়েছে।
এদিকে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী রমজান মাসে মসজিদে সীমিত মুসল্লি নিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করা হচ্ছে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, সবাইকে বলবো, ঘরে বসে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। রমজানে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন- এই করোনার হাত থেকে যেন বাংলাদেশ মুক্তি পায়, সারা বিশ্বের মানুষ যেন মুক্তি পায়।
নতুন করে দুই হাজার চিকিৎসক ও ছয় হাজার নার্স নিয়োগের কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, এই চিকিৎসক ও নার্সদের করোনা চিকিৎসার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। করোনা চিকিৎসার জন্য প্রত্যেক জেলায় আইসিইউর ব্যবস্থা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী নতুন চিকিৎসকদের নিয়োগের বিষয়ে বলেন, এরই মধ্যে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে যারা রয়ে গেছে (উত্তীর্ণ কিন্তু সুপারিশপ্রাপ্ত নয়) তাদের থেকে আমরা নিচ্ছি। ছয় হাজার নার্সও আমরা নিয়োগ দেবো। যার প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আমি নিজেই মিটিং করে এটা সব ঠিকঠাক করে দিয়েছি।
নতুন নিযোগকৃতদের করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনে বিদেশ থেকে লোক এনে তাদের আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাবো। প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা চিকিৎসা সেবা দিবে।
স্বাস্থ্যসেবা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা স্বাস্থ্যসেবার দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি। আমরা প্রত্যেক জেলাতেই কিন্তু যেটা ভালো হাসপাতাল, সেখানে আইসিইউর ব্যবস্থা করব। এটা আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পর্যায়ক্রমে সব জেলাতেই এটা করে দেবো।
গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করছেন তার কার্যালয়ের মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে চার দফায় পৃথক ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং ময়মনসিংহ বিভাগের ৪৮টি জেলার সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।