ডেস্ক রিপোর্ট: তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ। সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘শাপলা’ হলে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি হচ্ছে সরকারের বর্তমান মেয়াদের শেষ ডিসি সম্মেলন।
এবারের সম্মেলনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কিত ডিসিদের ৩৪৭টি প্রস্তাব থাকছে। ডিসিদের বক্তব্য গুরুত্ব দিয়ে শুনবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া প্রশাসনকে গতিশীল করতে ও তৎপরতা বাড়াতে তিনি ডিসিদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেবেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, ডিসি সম্মেলন মাঠ প্রশাসনের সবচেয়ে বড় সম্মেলন। এখানে ডিসিরা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান। জেলার বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরতে পারেন।
মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করেন। এরপর সভা থেকে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়। প্রতিবছরের মতো এবারও ডিসি সম্মেলনে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের সুপারিশ করা হবে। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও দিকনির্দেশনা নেবেন জেলা প্রশাসকরা।
পরদিন বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে সমাপনী অধিবেশন। এদিকে সোমবার সচিবালয়ে ডিসি সম্মেলন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এনএম জিয়াউল আলম বলেন, সরকারের নীতিনির্ধারক ও জেলা প্রশাসকদের মধ্যে সামনা-সামনি মতবিনিময় ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য প্রতি বছর ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এবার সম্মেলনে ২২টি অধিবেশন হবে। এর মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে কার্য অধিবেশন ১৮টি, এছাড়া একটি উদ্বোধন অনুষ্ঠান একটি সমাপনী অনুষ্ঠান, একটি মুক্ত আলোচনা এবং রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হবে।
২৬ জুলাই সম্মেলন শেষ হবে জানিয়ে সচিব বলেন, সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ ৫২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অংশগ্রহণ করবে। কার্য অধিবেশনগুলোতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব ও সচিবরা উপস্থিত থাকবেন। অধিবেশনগুলো হবে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে। কার্য অধিবেশনগুলোতে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম।
ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ৩৪৭টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে জানিয়ে জিয়াউল আলম বলেন, এর বাইরেও জেলা প্রশাসকদের তাৎক্ষণিক কোনো প্রস্তাব থাকলে তা অধিবেশনে উপস্থাপিত হতে পারে। এ বছর সবচেয়ে বেশি প্রস্তাব পাওয়া গেছে ভূমি মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত।
এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগসংক্রান্ত প্রস্তাব বেশি পাওয়া গেছে। সম্মেলনের মূল বিষয় হবে- ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ পুনর্বাসন কার্যক্রম, স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসৃজন, দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার, শিক্ষার মান উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ রোধ, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন এবং উন্নয়ন কার্যক্রমের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়।
ভূমি নিয়ে সবসময় বেশি প্রস্তাব আসে, তবে কি ভূমির সমস্যাগুলোর সমাধান হচ্ছে না- এ বিষয়ে জিয়াউল আলম বলেন, প্রতিবার ভূমি নিয়েই বেশি প্রস্তাব আসে। এ সমস্যা সমাধানে কিছু কাজও হাতে নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশনের কাজ হচ্ছে। ভূমি রেজিস্ট্রেশন, সেটেলমেন্টও ডিজিটাইজ করা হচ্ছে। এগুলো হয়ে গেলে ভূমিসংক্রান্ত মামলা কমে যাবে। তখন প্রস্তাবের সংখ্যাও কমে যেতে পারে।
মাদকের বিষয়ে ডিসিদের কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব বলেন, প্রস্তাব বলে এগুলো বলতে পারছি না, সিদ্ধান্ত হলে জানাব। নির্বাচন সামনে রেখে সম্মেলন হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতি বছর সাধারণত এ সময়েই সম্মেলন হয়। এর সঙ্গে নির্বাচন কোনোমতেই সংশ্লিষ্ট নয়।
জিয়াউল আলম আরও বলেন, আমরা আশা করছি, এ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের সঙ্গে মাঠের যে কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসকরা আছেন তারা পরিচিত হবেন। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে সরকারের দিকনির্দেশনা সরাসরি এখান থেকে গ্রহণ করতে পারবেন। সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে যে নতুন নতুন নীতি-কৌশল বা নীতিমালা জারি হয়েছে, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসকরা সম্যক ধারণা লাভ করতে পারবেন।
এ অবহিতকরণের মাধ্যমে আগামী অর্থবছরে যেসব মন্ত্রণালয় বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, তার আওতায় বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে ডিসিদের সহযোগিতা ওনারা চাইতে পারেন। এর মাধ্যমে সরকারের গৃহীত সব উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের কাজ ত্বরান্বি^ত হবে বলে আমরা মনে করি।
গত বছর ডিসি সম্মেলনে নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বছরের ডিসি সম্মেলনে নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সমন্বিত হার ৯৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।