ডেস্ক রিপোর্ট: পোল্যান্ড থেকে যুক্তরাজ্যে অভিবাসিত ইহুদি আইনজীবী লর্ড কার্লাইলকে দিয়ে খালেদা এবং বিএনপির পক্ষে লবিং করাতে তাকে দিল্লিতে পাঠাচ্ছেন তারেক রহমান। এই খবর প্রকাশের পর আবারো কার্লাইলকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনায় মুখর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন।
লর্ড কার্লাইল সম্পর্কে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। বৃটেনে পোলিশ অভিবাসী পিতামাতার সন্তান অ্যালেক্স কার্লাইল বড় হয়েছেন নর্থ ওয়েলস ও ল্যাঙ্কাশায়ারে। ২০০১ সালে, বৃটেন সন্ত্রাসবাদ নিয়ে যে আইন প্রনয়ণ করে, তার স্বাধীন পর্যবেক্ষক (ইন্ডিপেন্ডেন্ট রিভিউয়ার) হিসেবে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১১ সাল পর্যন্ত এই পদে ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে সন্ত্রাসবাদে তার সমর্থন এবং জড়িত থাকার অভিযোগে এই পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয় ব্রিটেন সরকার।
ব্রিটিশ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে কার্লাইলকে নিয়ে বিভিন্ন ধরণের মুখরোচক গল্প চালু আছে। ব্রিটেনের সংবাদ মাধ্যমে তিনি কিছুটা নারীঘেঁষা আইনজীবী হিসেবে পরিচিত। শিক্ষানবীশ একাধিক নারী আইনজীবীরা বিভিন্ন সময় তার কাছে যৌন হেনস্তার শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। লর্ড কার্লাইলের এই নারী আসক্তির জের ধরে ২০১৩ সালে তার স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। তখন কার্লাইলের স্ত্রী তার বিরুদ্ধে একাধিক নারীর সাথে পরকীয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন।
২০১৩ সালে কার্লাইলের সাথে তার স্ত্রীর বিচ্ছেদের পরই মূলত খালেদার সাথে উল্লেখযোগ্য সখ্যতা গড়ে উঠে তার। ২০১৭ সালে খালেদা লন্ডনে গেলে কার্লাইলের সাথে বেশ কিছু একান্ত সময় কাটিয়েছিলেন বলেও শোনা গিয়েছিলো। পরবর্তীতে বিভিন্ন বিষয়ে কার্লাইলের সাথে আলোচনা করেছেন খালেদা এবং তারেক। লন্ডনে তারেকের বাসায় প্রায়ই কার্লাইল বেড়াতে আসে বলেও জানা গেছে তারেকের ঘনিষ্টদের কাছ থেকে।
গত এপ্রিল মাসে খালেদার মামলার জামিনের জন্য লর্ড কার্লাইলকে খালেদার আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে আগে থেকেই বিতর্কিত লর্ড কার্লাইলকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় তখন বিষয়টি ভালোভাবে নেননি দলটির অনেক আইনজীবী। বিএনপির বিভিন্ন আইনজীবীরা বলছেন, ‘বিতর্কিত বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে দেশের বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের অপমান করা হয়েছে। দেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অহেতুক প্রশ্ন তুলতেই এই নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে। বিএনপি যদি সত্যিকার অর্থে খালেদা জিয়ার ভালো চাইত, তাহলে বিতর্কিত ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়ে জনমনে প্রশ্ন তোলার সুযোগ দিত না।`
এদিকে এবারো কার্লাইলের এই দৌড়ঝাঁপকে ভালোভাবে নেয়নি বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। খালেদার কয়েকজন দেশীয় আইনজীবীর কার্লাইলের সাথে দিল্লিতে যাওয়ার কথা থাকলেও তারা এই ব্রিটিশ আইনজীবীর সাথে দেখা করতে অসম্মতি জানিয়েছে বলে জানা গেছে দলীয় সূত্রে।
সম্প্রতি আবারো খালেদার মুক্তির জন্য বিভিন্ন মহলে কার্লাইলের দৌড়ঝাঁপ শুরু হওয়াতে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন শুরু হয়েছে; তবে কি ব্রিটিশ ইহুদী আইনজীবী লর্ড কার্লাইল খালেদার রূপে মজেছেন?
প্রসঙ্গত লর্ড কার্লাইল সর্বপ্রথম আলোচনায় এসেছিলেন ২০১০ সালে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হলে জামায়াতের লবিস্ট হিসেবে বিচার কার্যক্রম নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রথম প্রশ্ন তোলেন কার্লাইল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলাকালীন সময়ে এই বিচার ঠেকাতে একাধিক বিবৃতি দেয়ার পাশাপাশি ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন ইহুদী আইনজীবী লর্ড কার্লাইল। পরবর্তীতে প্রকাশ্যে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করেছিলেন এই ব্রিটিশ আইনজীবী।