ফুটবলে সবসময় চেনা অঙ্ক মেলে না। এই না-মেলা অঙ্কই জন্ম দেয় ট্রাজেডির। বিশ্বকাপ ফুটবলে ট্রাজেডির ইতিহাস বেশ লম্বা। ম্যারাডোনার দেশ দু’বার বিশ্বকাপ জিতলেও তিনবার শিরোপার একেবারে কাছ থেকে ফিরে যেতে হয়েছে।
এবারের বিশ্বকাপে বড় দলগুলোর চলার পথ অমসৃণ। বিশ্বকাপে তারকাদের তারকা হিসেবে মেসিকে একবাক্যে স্বীকার করবেন সবাই। কিন্তু ফুটবল দলগত খেলা। এক মেসির ওপর ভর করে আর্জেন্টিনা শেষ ষোলোতে পৌঁছতে পারবে কিনা তার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
আর্জেন্টিনার এবারের খেলা এখন পর্যন্ত আমাকে খুশি করতে পারেনি। রক্ষণভাগ যথেষ্ট দুর্বল। এই ডিফেন্স নিয়ে গ্রুপের প্রথম ম্যাচে ড্র করেছে তারা। হারেনি এই বেশি। গোল করে লিড ধরে রাখতে পারছে না দলটি। আগের ম্যাচে আইসল্যান্ড যেভাবে ডিফেন্সিভ খেলেছে, তাতে দিশেহারা ছিল আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লাইন।
যুগোস্লাভিয়াকে ফুটবল শিখিয়েছিল পুসকাসের হাঙ্গেরি। যুগোস্লাভিয়া এখন আর নেই। ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। ক্রোয়েশিয়া ওই টুকরোগুলোরই একটি অংশ। ১৯৯১ সালে স্বাধীন হওয়া দেশটি হাঙ্গেরিয়ান স্টাইলে খেলে। ক্রোয়েশিয়াদের খেলায় দেখা যায় চোখ ধাঁধানো স্কিল। ফুটবলের এই ঘরানাকে সম্বল করে বিশ্বকাপের মূল আসরে প্রথম আবির্ভাবেই তারা চমকে দিয়েছিল। তাদের খেলা দেখে বোঝা যায়নি, দেশটি গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত ছিল।
ফ্রান্স বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার তৃতীয় হওয়াটা কোনো কাকতালীয় ব্যাপার ছিল না। ছিল ঐতিহ্যের বিস্ফোরণ। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের পর ক্রোয়েশিয়া আর তাদের ফর্ম ধরে রাখতে পারেনি। ঠিক সাবেক যুগোস্লাভিয়ার মতো। দুর্দান্ত ছাত্র, কিন্তু আসল পরীক্ষার চাপ নিতে পারে না। যদিও ক্রোয়েশিয়া এবারের বিশ্বকাপে এরই মধ্যে তিন পয়েন্ট পেয়েছে। আজকের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়া এক পয়েন্ট পেলে শেষ ষোলোতে খেলাটা সহজ হতে পারে।
অন্যদিকে মেসিদের সম্ভাবনা জিইয়ে থাকবে। তবে তিন পয়েন্ট পেলে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার নিশ্চয়তা মিলতে পারে আর্জেন্টাইনদের। আর হেরে গেলে বেজে যেতে পারে বিদায় ঘণ্টা। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে মেসিকেই ব্যবধান গড়ে দিতে হবে এবং সে কাজটি মেসিকে দিয়েই সম্ভব।
আমি নিশ্চিত, ম্যাচে পার্থক্যটা গড়ে দেবেন মেসিই। যদি ফুটবলের বরপুত্রকে ক্রোয়াটরা বোতলবন্দি করে ফেলতে না পারে। কেননা দলটির মিডফিল্ডে কিছু ভালো মানের ফুটবলার রয়েছেন। তারা মেসিকে যেভাবেই হোক ব্লুক করার চেষ্টা করবে। নাইজেরিয়ার সঙ্গে ভালো পারফরম্যান্স করে ক্রোয়েশিয়া জিতেছে।
ডেনমার্ক ও অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। ভালো খেলেই ফ্রান্সের কাছে হেরেছিল সকারুরা। ফ্রান্সকে তারা বেশ ভুগিয়েছিল। ফ্রান্স তারুণ্যনির্ভর দল। সমর্থকদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে চাইলে ফ্রান্সকে ভালো ফুটবল খেলতে হবে। গ্রিজমান ও পগবাকে জ্বলে উঠতে হবে।
কলম্বিয়ার বিপক্ষে মাঠের পারফরম্যান্সে সেরা ছিল জাপান। জাপানকে খাটো করে দেখার কিছু নেই। ম্যাচে পুরো ৯০ মিনিটই ভালো খেলেছে তারা। বিশ্বকাপে কোনো লাতিন দলের বিপক্ষে এটাই এশিয়ার কোনো দেশের প্রথম জয়।
রাশিয়ার জয় দুটি বিশ্বকাপকে আরও প্রাণবন্ত করেছে। মিসরের সালাহ মাঠে নামলেও সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি। সেনেগালের খেলা দেখে আমি অভিভূত হয়েছি। তারা জানান দিয়েছে যে, দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার মতো দল। তবে পোল্যান্ডের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি।