স্টাফ রিপোর্ট:
গাইবান্ধার শীর্ষস্থানীয় বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আহম্মদ উদ্দিন শাহ্ শিশু নিকেতন স্কুল এন্ড কলেজে অচলা অবস্থা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা চরম বিপাকে পড়েছে। এরপর বৃহস্পতিবার একই দাবীতে শিক্ষকরা কর্মবিরতি করায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার শিক্ষার্থী ক্লাশ করতে না পেরে বাড়ি ফিরে যায়। এঘটনার পর প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাজহার উল মান্নান নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে গাইবান্ধা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।
বুধবার অধ্যক্ষের অপসারণের দাবী তুলে প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন কয়েকজন শিক্ষক। পরে শিক্ষকদের পক্ষ নিয়ে কিছু ছাত্র উত্তেজিত হয়ে অধ্যক্ষ মাজহার উল মান্নান, গভর্ণিং বডির সভাপতি শাহজাদা আনোয়ারুল কাদিরের বাসায় ও প্রতিষ্ঠানের মুলগেটে ভাংচুর চালায়। এনিয়ে স্কুল এলাকায় টানটান উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে এঘটনার প্রেক্ষিতে স্কুল কর্তৃপক্ষের জবাবে উঠে আসে ওই প্রতিষ্ঠানের চার শিক্ষকের অনিয়ম-দূর্নীতির চিত্র।
প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতি ও জেলা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের সভাপতি শাহজাদা আনোয়ারুল কাদির বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী কোন শিক্ষার্থীকে শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। কয়েকজন শিক্ষক এ নিয়ম লংঘন করলে ইতিপূর্বে তাদের সতর্ক করা হয়। এটিও শিক্ষকদের ক্ষুব্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ। এছাড়া অতিসম্প্রতি একাদশ শ্রেণিতে দ্বিতীয় পর্বের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, বেশকিছু ছাত্র পরীক্ষার খাতায় যে নম্বর পেয়েছে, কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে পরীক্ষা কমিটির দাখিলকৃত ফলাফল শিটে ছাত্রদের নম্বর বেশী করে দেয়া হয়। বিষয়টি অধ্যক্ষের নজড়ে এলে তিনি কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই শিক্ষকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। নোটিশ প্রাপ্ত পরীক্ষা কমিটির আহবায়ক প্রভাষক রফিকা ইসলাম, সদস্য শফিউল আলম সরকার, তানিয়া শারমিন ও সোহেল রানা এমন ঘটনায় ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত জবাব দেন। এরপর প্রতিষ্ঠানের সভাপতি শিক্ষকদের এক বৈঠকে অভিযুক্তদের ভৎসনা করেন। তিনি আরও বলেন, তারা এই ন্যাক্কারজনক অপরাধ থেকে রক্ষা পেতে তাদের চাকরীচ্যুত করা হয়েছে বলে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে তাদের অনুগত ছাত্রদের উত্তেজিত করে। এরপর তারা কোমলমতি ছাত্রদের দিয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে আপত্তিকর শ্লোগান ও কর্তৃপক্ষের বাসা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর চালায়।
প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মাজহার উল মান্নান বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষকরা কারণ দর্শানোর জবাবে মুদ্রণজণিত ভুলের কথা স্বীকার করলেও বিষয়টি যে উদ্দেশ্য প্রণোদিত তা একেবারে স্পষ্ট। কেননা তারা কোন ছাত্রদের নম্বর না কমিয়ে তাদের পছন্দের নির্দিষ্ট ছাত্রদের নম্বর বাড়িয়ে দেন। যেমন, পদার্থ বিজ্ঞানের ১৬ জন যাদের মধ্যে ৫৭ রোলধারী ৩ নম্বর পেলেও তার নম্বর করা হয় ১৩। এমনিভাবে রসায়নের ১৪ জন, উচ্চতর গণিতের ১২ জন, ইংরেজীর ১২ জন, বাংলার ১২ জন, জীব বিজ্ঞানের ১১ জন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১৯ জন পরীক্ষার্থীর নম্বর বৃদ্ধি করা হয়।
এ ব্যাপারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির শিক্ষক মাহামুদুল হাসান খান বলেন, অন্য ছাত্রছাত্রীরা বিশেষ ছাত্রছাত্রীদের নম্বর বৃদ্ধির বিষয়ে তার কাছে অভিযোগ করে। তখন তিনি কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানান যে, তার অনুমতি ছাড়াই পরীক্ষা কমিটি ইচ্ছেমতো ওই নম্বরগুলো বাড়িয়েছে।
পরীক্ষ কমিটির সদস্য ও অভিযুক্ত শিক্ষক শফিউল আলম সরকার বলেন, কম্পিউটারে অনভিজ্ঞতার কারণে ফলাফল শীটে ভুল হওয়ার কারন জানিয়ে আমরা কর্তৃপক্ষকে নোটিশের জবাব দিয়েছি। এরপর মৌখিকভাবে অধ্যক্ষ পরীক্ষা কমিটির চার শিক্ষককে পরদিন থেকে স্কুলে না আসার কথা বলে দেন। এতে তারাসহ সহকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে অধ্যক্ষের অপসারণের দাবীতে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। এমনকি অধ্যক্ষের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
অভিভাবক ও রাজনীতিবীদ সরওয়ার হোসেন শাহীন বলেন, স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করার জন্য একটি মহল কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উষ্কানি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা কোন ভাবেই তা মেনে নেবো না। শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অভিভাবকদের এগিয়ে আসা দরকার। আজ শুক্রবার দুপুরে স্কুল চত্বরে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে আলোচনা সভা আহবান করা হয়েছে। আগামী রোববার থেকে এইচএসসি এবং একযোগে সকল ক্লাশের পরীক্ষা শুরু হওয়ার মুখে এমন পরিস্থিতি ছাত্র ও অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
এদিকে গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, খান মো. শাহরিয়ার বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় এবং আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।