আফতাব হোসেন:
লিপি বেগম, গাইবান্ধার একটি কলেজে লেখাপড়া করেন। পরিবারে আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে পরীক্ষার ফরমফিলাপ করার সামর্থ্য নেই তার। উপায়ন্তরহীন এই শিক্ষার্থী একারনেই এসেছেন জেলা প্রশাসকের কাছে। গিদারী ইউনিয়ন থেকে এসেছেন সাহারবানু নামের এক নারী। তার থাকার ঘরটি কয়েকদিন আগে অগ্নিকান্ডে পুড়ে গেছে। আবেদন করেছিলেন গৃহনির্মানে সহযোগিতার জন্য। আবেদনের প্রেক্ষিতে সহায়তা পাবেন কি-না এ তথ্য জানার জন্য এসেছেন- জেলা প্রশাসকের কাছে। প্রতি বুধবারে গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন নারী পুরুষ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে নিজের নাম তালিকাভুক্ত করেন গণশুনানীর রেজিষ্টারে।
প্রতি বুধবার আসলেই গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দেখা যায়, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ভীড়। উদ্দেশ্যে গণশুনানীতে জেলার সর্বোচ্চ কর্মকর্তার কাছে নিজেদের সমস্যাসমূহ খোলা-মেলাভাবে উপস্থাপন করে প্রতিকার পাওয়া। গণশুণীতে বর্তমান জনবান্ধব জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিরলসভাবে পরিদর্শন কার্যক্রমের পাশাপাশি গণশুনানীতে সময়দেন অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে। জেলা প্রশাসকের মমত্বসূলভ আচার-আচরণ ইতোমধ্যে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাবপভাবে সাঁড়া পড়েছে। এতে করে সাধারন নাগরিকেরা স্থানীয়ভাবে সরকারের সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে জেলা প্রশাসকের কাছেই ছুঁটে আসছেন। এখানে তথ্য ও পরামর্শ সেবার পাশাপাশি অসহায় মানুষজন আর্থিক সহযোগিতা পেয়েও উপকৃত হচ্ছেন সাধারন নাগরিকগণ। একারনেই প্রতিনিয়তই বাড়ছে গণশুনানীতে আসা নাগরিকের সংখ্যা।
প্রশাসনের নিজস্ব ফান্ড থেকে তাৎক্ষনিকভাবে শিক্ষার্থীদের পড়া লেখা, অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতাও করার পাশাপাশি সমস্যার ধরণ অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদনগুলো প্রেরণ করেন। আবার যেসব আবেদন তিনি বিভিন্ন দপ্তরের পাঠান সেগুলো যথারীতি মনিটরিংও করেন।
গাইবান্ধার বোয়ালি থেকে আসা এক আঞ্জুয়ারা নামের এক মহিলা জানান, ডিসি স্যারের এমন ব্যবহার যদি সব অফিসারদের হতো তাহলে এখানে আসা লাগতো না। একই রকম অভিমত লালমিয়া নামের এক ভূমিহীনের। তিনি বলেন, স্যার কি সুন্দর করে কথাহগুলো শোনেন। কিছু পাই আর না পাই ওনার কথাতেই শান্তি।
এ প্রস্েঙ্গ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান এম. আবদুস্ সালাম জানান, জনগণ যার উপর আস্থা পায় তার কাছেই যেতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। বর্তমান জেলা প্রশাসক মহোদয় অত্যন্ত আন্তরিক এবং জেলার সমস্যা সমাধানকল্পে সকলের মতামতকে গুরুত্ব দেন। আর একারনেই লোকজন সহজেই তাঁর কাছে যেতে পারেন।
জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল জানান, বর্তমান সরকারের সেবা যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ অনায়াসে নিতে পারে এজন্যই গণশুনানী। তিনি মনে করেন, প্রতিটি নাগরিকের যথাযথ সেবা ও পরামর্শ পাওয়ার অধিকার আছে, এজন্য প্রশাসনের প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সেবাদানের মানষিকতা থাকতে হবে। জেলা প্রশাসক ফেসবুকের মাধ্যমে নাগরিক সেবা প্রদানের পাশাপাশি সরাসরি সেবাপ্রদানের অন্যান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। শুধু জেলাতেই না জনগণ যাতে উপজেলা পর্যায়েও এই সেবা যথাযথভাবে পান এব্যবস্থাও করেছেন।
সরকারের স্থানীয় সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে অসহায় সাধারণ নাগরিকেরা যখন বঞ্চিত হন, তখনই খুজতে থাকেন কোথায় গেলে পাওয়া যায় সমস্যাগুলো সমাধানের সঠিক পথ। আর এই পথ বেগবান ও প্রবেশাধিকার সহজতর করেছেন গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল। সপ্তাহের বুধবারে গণশুনানীতে তিনি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আসা লোকজনের কথা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে শোনেন। পরামর্শ ও সমাধানের উদ্যোগও নেন এবং মনিটরিং করেন নিয়মিতভাবে। একারণেই জেলা প্রশাসকের সৌহার্দপূর্ণ ব্যবহার এবং আন্তরিকতায় অত্যন্ত খুশি সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষজন।